রাজ্যের খবর জেলার খবর প্রযুক্তি

গঙ্গাসাগর মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব পালনের জন্য এবার বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে পুরস্কৃত করবে সরকার।

ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর দিন-রাত জেগে সাগর মেলা সামলে পুরস্কৃত হবেন মন্ত্রীরাও গঙ্গাসাগরে থেকে সুষ্ঠুভাবে মেলা পরিচালনার দায়িত্ব পালনের জন্য এবার বেশ কয়েকজন
মন্ত্রীকে পুরস্কৃত করবে সরকার।
মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন
করে সে কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গঙ্গাসাগর
মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য
সকলকে ধন্যবাদ। প্রায় ১ কোটি ১০
লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল এবারের
মেলায়। আমার ১০-১২ জন মন্ত্রী দিন-
রাত জেগে কাজ করে আমাদের উতরে
দিয়েছেন, আমি তাঁদের স্যালুট জানাই।
আমি ওঁদেরকে অ্যাপ্রিসিয়েশন লেটার
আর একটা করে মেমেন্টো দেব।”
একই সঙ্গে মেলা পরিচালনার দায়িত্বে
থাকা সমস্ত দফতর এবং স্বেচ্ছাসেবী
সংস্থাকেও এদিন ধন্যবাদ জানিয়েছেন
মুখ্যমন্ত্রী। জানান, কীভাবে জলপথ পার
করে গিয়ে একটা দ্বীপের মধ্যে এভাবে
একটা মেলা পরিচালনা করা হয়।
বলেন, “পুণ্যার্থীদের জন্য ৫ লক্ষ পর্যন্ত
বিমা রয়েছে। কেউ জানে না কী করে
এত বড় মেলার কাজটা হল! আমরা
ম্যাজিক জানি না। কিন্তু আমরা জানি,
মনিটর ঠিক করে করলে এবং হার্ড
ওয়ার্ক করলে সব সম্ভব। চিফ
সেক্রেটারি, হোম সেক্রেটারি, আরবান,
পাওয়ার, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, পিএইচি
থেকে পিডব্লুডি, গঙ্গাসাগর মেলা
কর্তৃপক্ষ, সমস্ত এনজিও, সমস্ত
সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
সাগরমেলা শেষে এদিন লাখ লাখ
পুণ্যার্থী দলে দলে বাড়ি ফিরলেন।
সরকারি বেসরকারি বাস এবং ভেসেলে
সাঙ্গ হল সাগরমেলা। ফিরছেন পুণ্যার্থীরা। চলছে সাফাই অভিযান। মঙ্গলবার সেই অভিযানে শামিল রাজ্যের মন্ত্রীরাও।
রয়েছেন স্নেহাশিস চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসু-সহ অন্যরা।
চড়ে তাঁরা রওনা হন। এবার সাগরে
পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য রেকর্ড
সংখ্যক বাস এবং ভেসেল দিয়েছিল
পরিবহণ দফতর। এদিন মেলা শেষে
রাজ্য সরকারের ছয় মন্ত্রী-সহ রাজ্য ও
জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা
সমুদ্রসৈকত সাফাইয়ে নামেন। ছিলেন
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব
চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসু, স্নেহাশিস
চক্রবর্তী, বঙ্কিম হাজরা ও ইন্দ্রনীল সেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের
সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রি বিশ্বাস,
জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা ও সুন্দরবন
পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর
রাও-ও এই সাফাই অভিযানে অংশ
নেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন,
“মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত
সাগরমেলায় মোট এক কোটি দশ লক্ষ
তীর্থযাত্রী এসে পবিত্র স্নান সেরে
কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ির
পথে পা বাড়িয়েছেন। তীর্থযাত্রীদের
বেশিরভাগই এসেছেন উত্তরপ্রদেশ,
বিহার, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশ থেকে।
বিদেশেরও বহু পর্যটক এবার সাগরমেলায় এসে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন।” এ পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৬৭২ জন তীর্থযাত্রী সাগরমেলায় তাঁদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পুলিশ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় ১৩ হাজার ৬৫১ জন তাঁদের পরিজনকে আবার ফিরে
পেয়েছেন। ৫১ জনকে কলকাতার
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো
হয়েছে। মোট ৯ জনকে এয়ার
অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতার
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা
হয়েছে।”
প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,
সাগরমেলায় এবার ৪২৩টি পকেটমারির
ঘটনায় ৪০২টি ক্ষেত্রেই খোয়া যাওয়া
জিনিসপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় ৮৭৬
জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে এতদিন পর্যন্ত যাঁরা
মেলাচত্বর ও সমুদ্রসৈকত সাফাই করে
পরিচ্ছন্ন রাখছিলেন তাঁদের কয়েকজনের
হাতে এদিন শংসাপত্র তুলে দেন অরূপ।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত
মেলায় অসুস্থতাজনিত কারণে মোট ৯
জন প্রবীণ তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এদিন দুটি ভেসেল কচুবেড়িয়া ঘাট
থেকে লট নম্বর ৮ ঘাটে আসার সময়
প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যে পড়ে। জাতীয়
বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা দুটি
ভেসেলের প্রায় ৪০০ জন যাত্রীকে
উদ্ধার করেন। কপিলমুনি আশ্রমের
প্রধান জ্ঞানদাস মহন্ত মেলার ব্যবস্থাপনায়
অত্যন্ত খুশি। সাগরমেলাকে জাতীয়
মেলার স্বীকৃতি বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে
সমর্থন জানিয়ে মহন্ত বলেন, “আমিও
চাই সাগরমেলা জাতীয় মেলার স্বীকৃতি
পাক। আমিও এ বিষয়ে অনেকবার
প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *