দেশের খবর

বাঁদরের বাঁদরামি !!! প্রতিশোধ নিতে ২২ কিলোমিটার পথ পেরোলো বাঁদর.আতঙ্কে যুবক…….

বিউরো ঃ- বাঁদররের (Monkey) বাঁদরামির কথা মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। বুদ্ধিও তাদের নেহাত কম নয়। তাই বলে কারও উপরে প্রতিশোধ নিতে কোনও বাঁদর বাইশ কিলোমিটার পথ উজিয়ে আসবে, এমন ঘটনার কথা সচরাচর শোনা যায় না। বাস্তবে অবশ্য এমনটাই ঘটিয়ে ফেলেছে এক বাঁদর।

আর তার ভয়ে এখন গোপন ডেরায় লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন এক যুবক (Monkey takes revenge in Karnataka)।

ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের (Karnataka) চিক্কামাগালুর জেলার কোট্টিগেহারা গ্রামে। ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ সেপ্টেম্বর। জানা গিয়েছে বছর পাঁচেকের একটি পুরুষ বাঁদর কয়েকদিন ধরেই গ্রামে ঢুকে উপদ্রব চালাচ্ছিল। গ্রামবাসীদের হাত থেকে খাবারের প্যাকেট কেড়ে নিচ্ছিল সে। প্রথমে বাঁদরের বাঁদরামিকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি স্থানীয়রা। কিন্তু গ্রামের একটি স্কুল খুলতেই সেখানে গিয়েও হাজির হয় ওই বাঁদরটি। বাঁদরের উপদ্রবে ভয় পেয়ে যায় স্কুল পড়ুয়ারা। এর পরই অভিযোগ পেয়ে বাঁদরটিকে ধরতে হাজির হয় বন দফতরের একটি দল।

যদিও বাঁদরটিকে ধরা সহজ হয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় দু’ জন অটোচালক এবং কয়েকজন বাসিন্দার সাহায্য নেন বন দফতরের কর্মীরা। বাঁদরটিকে তাড়া করে একদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয়দের পরামর্শ দেয় তাঁরা। যাতে বাঁদরটিকে ধরা সহজ হয়।

এতে অবশ্য হিতে বিপরীত হয়। জগদীশ বি বি নামে স্থানীয় এক অটোচালকও বাঁদরটিকে ধরতে বন দফতরকে সাহায্য করতে যান। কিন্তু আচমকাই বাঁদরটি তাঁকে আক্রমণ করে। জগদীশের হাত সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়ে, কামড়ে দেয় সে। ভয় পেয়ে পালিয়ে যান জগদীশ। কিন্তু তাতেও রাগ কমেনি ওই বাঁদরের। জগদীশের উপরে হামলা চালাতে তার অটোর মধ্যেও লুকিয়ে থাকত সে। সুযোগ মতো হামলা চালাতো ওই যুবকের উপরে। শুধু তাই নয়, জগদীশের অটোর সিটও ছিঁড়ে দেয় ওই বাঁদরটি।

আতঙ্কিত জগদীশ বলেন, ‘ওই বাঁদরটা পাগলের মতো আমাকে তাড়া করছিল। আমি যেখানেই যেতাম, ও হাজির হয়ে যেত। আমার হাত এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে আমি অটো চালাতে পারছি না। অথচ এটাই আমার উপার্জনের একমাত্র পথ। ভয়ে বাড়িতেও যেতে পারছি না, পাছে বাঁদরটি সেখানেও হাজির হয়! বাড়িতে আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে, তাদের উপরে আক্রমণ করলে কী হবে?’

এর পরে অবশ্য বন দফতরের হাতে ধরা পড়ে বাঁদরটি। তিরিশ জন মিলে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় বাঁদরটিকে ধরেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন গ্রামবাসীরাও। কোট্টিগেহারা থেকে প্রায় বাইশ কিলোমিটার দূরে বালুর জঙ্গলে বাঁদরটিকে ছেডে দিয়ে আসেন বন দফতরের কর্মীরা।

কিন্তু বাঁদরটির মাথায় অন্য কিছু ঘুরছিল। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাইশ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কোট্টিগেহারাতে হাজির হয় সে। শুনতে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও বুদ্ধি করে কোট্টিগেহারার দিকে আসা একটি ট্রাকের মাথায় চড়ে বসে সে।

বাঁদরের প্রত্যাবর্তনের খবরে এখন রীতিমতো আতঙ্কে কাঁপছেন জগদীশ। ওই অটোচালকের আশঙ্কা, ফের তাঁর উপরে হামলা চালাতে পারে বাঁদরটি। ভয়ার্ত গলায় তিনি বলেন, ‘বাঁদরটি ফিরে এসেছে শুনে আমি ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছি। বন দফতরের কর্মীদেরও খবর পাঠিয়েছি। ভয়ে নিজের গোপন ডেরা থেকেও বেরোচ্ছি না। আগের বার এই বাঁদরটির কানে আমরা একটা দাগ দেখেছিলাম। এবারও সেই দাগই দেখেছেন গ্রামবাসীরা। ফলে ওই বাঁদরটিই যে ফিরে এসেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’

বাঁদরটিকে বন দফতরের যে দলটি ধরেছিল, তাঁর অন্যতম একজন সদস্য বলেন,’একজন মানুষের প্রতিই বাঁদরটি এমন আচরণ করছে কেন তা আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। হতে পারে অতীতে হয়তো এই বাঁদরটিকে ওই ব্যক্তি কোনও ভাবে আঘাত করেছিলেন। কিন্তু কোনও বাঁদর এভাবে একজন মানুষকেই বেছে বেছে আক্রমণ করছে, এই ঘটনা আমরা প্রথম দেখছি।’

তবে জগদীশকে স্বস্তি দিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ফের বাঁদকটিকে পাকড়াও করে বন দফতর। এবার তাকে আরও দূরের জঙ্গলে ছেড়ে আসা হয়েছে। তবু সাবধানী জগদীশ এখনও বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। পাছে ফের বাদরের প্রতিশোধের শিকার হতে হয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *