তনুশ্রী ভান্ডারী ডেক্স ঃ
সিঙ্গুরে যে জমিতে টাটাদের ন্যানো তৈরির কারখানার হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এখন কৃষকদের জন্য মাছের ভেড়ি তৈরি করছে সরকার৷ এই নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি৷
সিঙ্গুরে শিল্প হয়নি ৷ সুপ্রিম কোর্ট জমি চাষযোগ্য করার নির্দেশ দিয়েছিল ৷ সেই মতো কিছুটা অংশকে চাষযোগ্য করা হলেও অনেকটা জমিই এখনও পড়ে রয়েছে । সেখান চাষ করেও ভাল ফলন পাচ্ছেন না বলে দাবি কৃষকদের ৷ তাই বর্তমানে সিঙ্গুরের সেই জমি থেকে মাটি কেটে মাছের ভেড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশাল মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে এসে কাজ শুরু করেছে সরকার ৷ তাই নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কৃষকদের দাবি, জমি চাষের অযোগ্য, তাই তাঁরা সরকারি সহায়তায় মাছের ভেড়ি তৈরি করছেন । তবে শিল্পের বদলে সিঙ্গুরের জমিতে মাছের ভেড়ি তৈরি করায় শাসকদলকে একহাত নিয়েছে বিরোধীরা ৷ পাল্টা জবাব দিয়েছেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না।
২০১৬ সালে ৩১ অগাস্ট টাটাদের কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট । সেই অনুযায়ী কারখানা ভেঙে কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেয় সরকার । সেই বছরই ২০ অক্টোবর সিঙ্গুরের জমিতে সর্ষের বীজ ছড়িয়ে চাষের সূচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পাঁচ বছর অতিক্রান্ত । কিন্তু সেই জমির অনেকটা অংশ এখনও চাষের উপযুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ চাষীদের । এবার সেই জমির অন্তর্গত সিঙ্গুরের গোপালনগর মৌজায় শুরু হয়েছে মাছের ভেড়ি তৈরির কাজ । পাশাপাশি সিংহের ভেড়ি, খাসের ভেড়ি এলাকাতেও আরও কয়েকটা মাছের ভেড়ি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে খবর ।
গোপালনগর মৌজার কৃষক বনমালী মাইতি বলেন, “একটা স্বপ্ন ছিল কারখানা হবে । সেটা তো হল না । যা পাথর পড়ে আছে, সেখানে ধান চাষ করা সম্ভব নয় । তাই একটা চিন্তা ভাবনা করেছি যাতে কিছু রোজগার করা যায় । সেই অনুযায়ী আবেদন করেছিলাম মাছের ভেড়ি করার, সরকার অনুমতি দিয়েছে ।”
তৃণমূল পরিচালিত সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধাড়া বলেছেন, “আত্মী প্রকল্পের মাধ্যমে তিন বিঘা জমি বা তার বেশি জমিতে পুকুর খনন করে দেওয়া হচ্ছে সরকার থেকে । তাতে যেমন মাছ চাষ হবে, অন্যদিকে সেই পুকুরের জল চাষেরও কাজে লাগবে ।”
বনমালী মাইতির দেখাদেখি অনেক কৃষকই সিঙ্গুরের জমিতে মাছের ভেড়ি করতে উৎসাহী হয়েছেন । আরেক কৃষক সৌরভ মাইতি বলেন, “জমিটা আমরা চাষের উপযুক্ত করে উঠতে পারছিলাম না ৷ তাই আমরা এই মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমাদেরও পুকুর খনন করার কাজ শুরু হবে । পাশে আরও কয়েকজনও এই মাছের ভেড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিঙ্গুরের জমিতে মাছ চাষ করা নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করেছেন সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা সঞ্জয় পান্ডে ৷ তাঁর কটাক্ষ, “রাজ্যের নেত্রী ধ্বংসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী । মাছের ভেড়ি করে পুঁটি মাছ চাষ হবে । পুঁটি মাছ চাষ করে নাকি কৃষকদের উন্নতি হবে । সিঙ্গুরের কৃষকরা ওখানে চাষ করবেন না ।”
এই ইস্যুতে গলা চড়িয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও ৷ তবে তাঁকে পাল্টা জবাব দিয়ে মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানেন দিলীপ ঘোষ একটা বদ্ধ পাগল । তিনি কী বলেন তা কেউ পাত্তা দেয় না । সিঙ্গুরের মানুষ বরাবর মমতার উপর আস্থা রেখেছেন ।”