নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে রাতের অন্ধকারে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এক তরুণী গৃহবধূর প্রাণরক্ষা করলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ডহারবারের দুই যুবক। ঘটনার কথা চাউর হতেই ওই দুই যুবক এখন রীতিমত হিরো।
বৃহস্পতিবার রাত তখন এগারোটা হবে। স্থানীয় এক বাসিন্দা একা এক তরুণীকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেন ডায়মন্ডহারবারের পুরোন কেল্লার মাঠে। বিষয়টি প্রথমে গুরুত্ব দেননি ওই ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তাঁর নজরে পড়ে তরুণীর সঙ্গে থাকা ব্যাগটি মাঠে পড়ে রয়েছে কিন্তু তরুণী উধাও। তরুণীর বিপদ আশঙ্কা করে তিনি ঘটনার কথা জানান ডায়মন্ডহারবার পুরসভার কাউন্সিলর অমিত সাহাকে। তৎক্ষণাৎ ওই কাউন্সিলর দুই যুবক রেজাউল করিম মল্লিক ও আক্রম মোল্লাকে নিয়ে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। তিনজনে মিলে চারদিক খোঁজাখুঁজির পর জ্যোৎস্না আলোয় হঠাৎ তাঁরা লক্ষ্য করেন হুগলি নদী যেখানে গিলেছে ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন কেল্লাকে সেখানে নদীতীর থেকে প্রায় চল্লিশ—পঞ্চাশ ফুট দূরে উথালপাথাল ঢেউয়ে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কেউ। আর দেরী করেননি রেজাউল আর আক্রম। দু’জনেই ঝাঁপ দিয়ে পড়েন নদীতে। এক মহিলাকে নদী থেকে উদ্ধার করে উপরে নিয়ে আসেন তাঁরা। এরপর কাউন্সিলর সহ তিনজন ওই মহিলাকে নিয়ে যান ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলে তাঁর। শুক্রবার সকালে দুই যুবকের এই অসম সাহসের কথা চাউর হয় পুরসভা এলাকা জুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশস্তির বন্যা বয়ে যায় কাউন্সিলর ও ওই দুই যুবকের নামে।
এদিকে প্রাণরক্ষা হওয়া ওই মহিলার ব্যাগ থেকে পাওয়া যায় চারপাতার একটি সুইসাইড নোট। সেই নোট থেকেই জানতে পারা যায় সন্ধ্যা মন্ডল নামে ওই তরুণী মন্দিরবাজারের বীরেশ্বরপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী। তাঁর বাপের বাড়ি মথুরাপুরের পুরকাইত পাড়ায়। দক্ষিণ বারাসাতে শ্বশুরবাড়ি। প্রথম পক্ষের স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্বামী ডেন্টিস্ট। ডেন্টিস্ট স্বামীর চেম্বারে সহকারীর কাজ করতেন। একদিন কোনওকিছু না জানিয়েই মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তাঁর কপালে সিঁদুর তুলে দেন ওই চিকিৎসক। ছ’মাস পর তাঁদের ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের দু’মাস পর চিকিৎসক স্বামীর সঙ্গে অন্য মহিলার বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে শ্বশুরবাড়িতে সবকিছু জানান সন্ধ্যা। সেই শুরু অশান্তির। শ্বশুরবাড়িতে তাঁর উপর চলতে থাকে নানা মানসিক অত্যাচার। ডিভোর্সের জন্য চাপও দিচ্ছিলেন দন্ত চিকিৎসক স্বামী। এসব কারণেই তাঁকে নিয়ে বাবা—মা ও বোনের মানসিক চাপ বাড়ছিল বলে নোটে উল্লেখ করে তরুণী গৃহবধূ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে নিজেকে ও বাপের বাড়ির লোকজনকে মুক্তি দিতে চান বলে সুইসাইড নোট লেখেন। পুলিশ জানিয়েছে, নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ওই তরুণী গৃহবধূর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁর সুইসাইড নোটটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুরু হয়েছে পুলিশী তদন্ত।