বিনোদন

যৌনপেশা ছেড়ে লেখিকা! এবার পোশাক শিল্পী নলিনী কে কুর্নিশ কেরল সরকারের,

বিউরো ঃ- বছর পনেরো আগে তাঁর কলম থেকেই বেরিয়েছিল এক যৌনকর্মীর জীবনচরিত। পুরুষতন্ত্রের দূর্ভেদ্য দেওয়ালে আঘাত হেনেছিল সে আত্মজীবনী। সমাজের নিন্দা, কলঙ্কের ভাগীদার এক যৌনপেশাধারীর জীবনযুদ্ধের বাস্তব ছবি ফুটে উঠেছিল তার ছত্রে ছত্রে। সালটা ছিল ২০০৫। ছকভাঙা সে জীবনচরিত লেখার পর নিজের জীবনটাই যেন আমূল বদলে গিয়েছিল নলিনী জামিলার।

বছর পনেরো পরে ফের শিরোনামে নলিনী! এ বার সিনেমায় তাঁর পোশাক পরিকল্পনাকে স্বীকৃতি দিল কেরল সরকার। শনিবার মণিলাল পরিচালিত ‘ভরতপুঝা’ চলচ্চিত্রে বিশেষ জুরির শিরোপা জুটেছে নলিনীর।

৬৯ বছরের নলিনীর জীবনে এমন মোড় বার বারই এসেছে। যৌনপেশা ছেড়ে কলম তুলে নিয়েছেন। সরব হয়েছেন লিঙ্গসাম্যের পক্ষে। সামাজিক সম্পর্কের খুঁটিনাটি নিয়ে পরামর্শদাতার ভূমিকাতে নেমেছেন। হেঁটেছেন সমলিঙ্গের মানুষদের সমানাধিকারের দাবিতেও।

এ হেন বর্ণময় জীবনে এ বার সরকারি স্বীকৃতি। কেরল চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে স্বীকৃতি পেয়ে উচ্ছ্বাস চেপে রাখেননি নলিনী। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে এক সাক্ষাত্‍কারে বলেছেন, ”সরকারি পুরস্কার জেতাটা সত্যি অপ্রত্যাশিত… জীবনে প্রথম বার কোনও সিনেমায় পোশাক পরিকল্পনা করলাম। এই সম্মানকে জীবনের সবচেয়ে বড় শিরোপা বলে মনে রাখব।”

এ সিনেমার চরিত্রেও যেন নলিনীর জীবনের ছায়া। মধ্য তিরিশের এক যৌনকর্মী সুগন্ধির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন নায়িকা সিজি প্রদীপ। সিনেমায় ধরা হয়েছে লিঙ্গবৈষম্যের দিকটিও। বড় পর্দায় নায়িকার পোশাকের ভাবনার পাশাপাশি যৌনকর্মীর আদবকায়দা ফুটিয়ে তুলতেও সিজিকে সাহায্য করেছেন নলিনী। তা করতে গিয়ে নিজের জীবনের অন্ধকার দিনগুলি বার বার তাঁকে তাড়া করেছে। নলিনীর কথায়, ”সুগন্ধির চরিত্রের জন্য পোশাক বাছতে গিয়ে তাঁর মধ্যে আমি নিজেকেই দেখতে পেয়েছি। কম বয়সের এক যৌনকর্মী হিসাবে নিজের কথাগুলিই ঘুরেফিরে মনে এসেছে।” নলিনী বলেন, ”কখনও দামি শাড়ি বা গয়না পরিনি। এমনকি টিপও নয়। এ সবই ওই চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি।” এ কাজে পরিচালক তাঁকে পুরো স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন নলিনী।

অথচ, কম বয়সে নিজের মতো করে বেঁচে থাকার এই অবাধ স্বাধীনতাই পাননি নলিনী। পড়াশোনা, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তার পর কম বয়সেই সংসার। তবে তা স্থায়ী হয়নি বেশি দিন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন। যৌনপেশায় আসার আগে কখনও ইটভাটায় কখনও বা পরিচারিকার কাজ করেছেন। এক সময় বাধ্য হয়েই যৌনপেশাকে বেছে নিয়েছেন। সে পেশায় থাকাকালীন গুন্ডা বা পুলিশের তাড়া থেকে শুরু করে খদ্দেরের মার— জুটেছে সব কিছুই। তবে সে অভিজ্ঞতা থেকেও লড়াইয়ের সাহস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নলিনী।

যৌনপেশা ছেড়ে কলম ধরামাত্রই সাফল্য এসেছে নলিনীর। মালয়ালম ভাষায় লেখা তাঁর আত্মজীবনী ‘অটোবায়োগ্রাফি অব আ সেক্স ওয়ার্কার’ দিনের আলো দেখামাত্রই বেস্টসেলারের তালিকায় উপরের দিকে। এর পর ২০১৮-তে আরও একটি বই। এ বার আত্মচরিত। খদ্দেরদের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্সের কথা— ‘রোমান্টিক এনকাউন্টার্স অব আ সেক্স ওয়ার্কার’। সে বই থেকেও খ্যাতি। তর্কবিতর্ক। তার পর থেকে নানা সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়েছেন নলিনী। খেয়াল রেখেছেন, যাতে যৌনপেশাধারী হোক বা সমলিঙ্গের মানুষজন— এঁদের প্রতি চিরাচরিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখনও স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি নলিনী। ইচ্ছে, বয়স্কদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল গড়বেন। এবং কোনও দিন তাঁর আত্মজীবনী ফুটে উঠবে বড় পর্দায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *