এদেশের চলতি কথার কি কোনও পূর্ণাঙ্গ অভিধান রয়েছে? সম্ভবত নেই। থাকলে প্রথমেই হাতড়াতে হতো যে ক’টা শব্দের মানে জানার জন্য, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘ব্লু ফিল্ম’। মোটামুটিভাবে ১৯৬০-এর দশক থেকে এই শব্দটা ভারতীয় পরিসরে হামাগুড়ি দিতে শুরু করে। এর আক্ষরিক অর্থ কী, তা সকলেই জানতেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে পর্নোগ্রাফিক সিনেমাকে ‘ব্লু ফিল্ম’ বলা হত, তা জানা যায়নি কিছুতেই। কার্যত সেই সময়ে খুব কম ভারতীয়ই পর্নোগ্রাফিক ছবির স্বাদ গ্রহণে সমর্থ হয়েছিলেন। বাজারে পল্লবিত হত ব্লু ফিল্ম-এর গপ্পো। কী সেই ছবি, তাতে ‘কতটা’ দেখানো হয়, সেই নিয়ে মিথ পাক খেত আরবান পরিসরে। কিন্তু কিছুতেই একথা জানা যায়নি, কোন কারণে ‘নীল’ রংটা সেঁটে বসেছিল এই জ্যঁরের ছবির শিরোভাগে।
সুলভ হলে জাতি হিসেবে ভারতীয়রা পর্ন-এর স্বাদ পায়। তখনও আম-ভারতীয় পরিসরে ‘ব্লু ফিল্ম’ নামটাই সচল। পাবলিকের ধারণায় নুন শো-য় প্রদর্শিত বি-গ্রেড সিনেমাকেও এই বর্গেই রাখা হতো। এক্স-ট্রিপল-এক্স ইত্যাদি ধারণা মোটেই ছিল না। তবে আস্তে আস্তে সে জ্ঞানগম্যি গজাতে শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই ‘ব্লু ফিল্ম’ তকমাটি এইসব ছমছমে ছবির গা থেকে সরেনি।
কেন এই বিশেষ রংয়ে ছোপানো হয়েছিল পর্ন-ছবির বংশকে— এই নিয়ে সম্প্রতি এক সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন অনেকে। দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরে উঠে এল কিছু পশ্চাদপট, যাদের যুক্তিগ্রাহ্য বলা যেতেই পারে।
আলোচকদের মতে—
• ভারতে যে সময়ে বি-গ্রেড মুভি তৈরি হতে শুরু করে, সেই সময়ে এই সব স্বল্প-বাজেট ছবির পোস্টার ছাপানো হত নীল-সাদা রংয়ে। সেই সূত্র থেকেই ‘নীল’-এর অনুষঙ্গ যুক্ত হয় এই ধরনের ছবির সঙ্গে।
• কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে কীভাবে ‘ব্লু ফিল্ম’ অভিধাটি চালু ছিল? অনেকেই লিখছেন, ১৯৬০-এর দশকে যখন বিদেশে ‘গোল্ডেন এজ অফ পর্ন’ সূচিত হচ্ছে, তখন বেশিরভাগ ছবিই ছিল অত্যন্ত স্বল্পব্যয়ে নির্মিত। প্রধানত সাদা-কালোয় ছবি শ্যুট করে তাতে রংয়ের বিভ্রম সৃষ্টির জন্য একটা নীল টিন্ট দেওয়া হত। সেই থেকেই এমন নাম বাজারে চালু হয়।
• সস্তায় ছবি নির্মাণের জন্য পরিচালকরা অনেক সময়েই কম দামে ড্যামেজড রিল কিনতেন। সেই রিল-এ তোলা ছবি রঙিন হলেও তাতে নীলচে একটা ভাব থেকে যেত। আজকে এইচডি-তে এই ছবিগুলিকে দেখলেও সেই নীলচে ভাব থেকেই যায়।
• ১৯৮০-র দশকে যখন ভিডিও ক্যাসেটের পার্লার গজিয়ে ওঠে, তখন নাকি অনেক জায়গাতেই সাধারণ ছবির ক্যসেটের থেকে পর্ন-এর ক্যাসেটকে আলাদা করতে নীল রঙের খাপ ব্যবহার করতেন পার্লার-কর্তারা। সেই থেকেও এমন নাম চালু হতে পারে।
এই কারণগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয়টিকেই বেশি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। কারণ, ‘ব্লু ফিল্ম’ অভিধাটি একান্তভাবে ১৯৬০ দশকের উদ্ভাবন। সেক্ষেত্রে ভিডিও ক্যাসেটের যুগকে এর ঘাড়ে চাপানোটা অনৈতিহাসিক।