বিউরো ঃ-সাহজামাল শেখ, না উনি তেমন কোনো পেজ থ্রি সেলিব্রিটি নন একজন সাধারন মানুষ, মুখভর্তি দাড়ি, পরনে সাদা মাটা পোশাক দেখতে তেমন সুপারস্টার না, তবুও তার কাজ অসাধারণ, রূপকথার নায়ক এর মতো তিনি এগিয়ে আসেন মানুষের কাজে।
‘চাক দে ইন্ডিয়া’র তিনি একজন ইন্ডিয়ান সিটিজেন। সামান্য গাড়ির ড্রাইভার কাজ মৃতদেহ বহন করা। ডোমের কাজ করতে করতে কখন যে ১০ হাজার ছাড়িয়ে ফেলেছেন মৃতদেহের সংখ্যা তা খোদাই জানেন।
বছর ৫৫ বয়স, ডায়মন্ড হারবার পৌরসভার মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি চালক মোহাম্মদ সাহজামাল শেখ আজ নিজেই একজন কিংবদন্তি। ২৩ বছর ধরে লাশকাটা ঘরে তার কেটেছে সংসার, এবং কর্মঠ এই মানুষটি এই করোনার কালে করোনার ডেড বডি বহন করেছেন ৩৭৮ জনের।
গঙ্গাসাগরে মা অভায়া লঞ্চ ডোবা তীর্থযাত্রীদের থেকে শুরু করে সংগ্রামপুর বিষ মদ কান্ডে মৃতদেহ বহন করে আজ ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে সম্মানিত তিনি। ডায়মন্ডহারবার মহকুমা শহরে ফকির চাঁদ কলেজ মাঠে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মহকুমাশাসক সুকান্ত সাহা তুলে দিলেন দেশ গৌরব সম্মান। হয়তো সে সম্মান দিল্লির লালকেল্লা ময়দান থেকে জোটেনি তাতে কি? মহাকুমা স্তরে এই স্বীকৃতি কম কিসের?
ডায়মন্ড হারবার 1 নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া পাশে মুসলমান পাড়ায় সাহজামাল মোল্লার বসত ভিটায় ছেলেমেয়ে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। করণা পরিস্থিতিতে মৃতদেহ যখন আত্মীয়-স্বজনদের ছোঁয়া বারণ তখন অন্য ডোমেদের সঙ্গে ডেড বডি তুলে কখনো কবরস্থানে কখনো শ্মশানে পৌঁছে দিয়েছেন সাহজামাল পরম মমতায় । ‘ওকে ছুও না ছুও না ছি, ওযে যমের অরুচি ‘সেই মানুষ সেই মৃত মানুষ ছুঁয়েছেন আপন আত্মীয়র মত পৌরসভার স্বর্গ রথ সকট গাড়িতে। মনে নেই কোন ঘৃণা স্বার্থপরতা, বরং আছে সহিষ্ণুতার আবহ।
ডায়মন্ডহারবার শহরের অলি গলি তার চেনা কত ভি ভি আইপি মৃতদেহ তার ড্রাইভিং করার সকট স্বর্গ রথে উঠেছে আবার কত প্রান্তিক সুজন চলেছে তার সকট। সাহজামাল এর জন্য গর্বিত যেমন পৌর কাউন্সিলর তেমনি গর্বিত পুরসভার চেয়ারপারসন প্রণব দাস।ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসক সুকান্ত সাহা পৌর ডোম গাড়ির চালককে আলাদা ডেকে যখন শাহজামাল ‘দাদা ‘সম্বোধন করেন তখন ডোমের চোখে অশ্রুকণা ঝিকমিক করে। এক প্রান্তিক মানুষ যেন স্বীকৃতি পান সহস্য মন ভালোবাসা। প্রজাতন্ত্র দিবসে এই ভালোবাসার স্মৃতি সম্মান স্বীকৃতি পদ্ম সম্মান বা পদ্মবিভূষণ থেকে কম কিসের?
লাশ কাটা ঘরে কবিতায় কবি জীবনানন্দ লেখেন এপিটাফ।’ হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার? আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো-বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেবো /কালীদহে বেনোজলে পার ;/আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার। ‘
