বিউরো ঃ- আপনার কি একাধিক সম্পর্ক রয়েছে? ওরাল সেক্সে (Oral Sex) কি অভ্যস্ত আপনি? তাহলে সাবধান! এই অভ্যাসই ডেকে আনতে পারে সমূহ বিপদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঙ্গীর শরীরে হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভির প্রাচুর্য থাকলে ওরাল সেক্স থেকেও হতে পারে মুখ ও গলার ক্যানসার (Throat Cancer)।
দিনের পর দিন অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবনে অভ্যস্ত হলে তা বিপদ ঘনাতে দেরি হবে না। কী ভাবে ছড়ায় ক্যানসার? ওরাল সেক্সের ফলে মাথা ও ঘাড়ে ছড়িয়ে পরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস(এইচপিভি)। এই ভাইরাস গলা ও মাথার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এত দিন পর্যন্ত ধূমপান ও মদ্যপানকেই গলা ও মাথার ক্যানসারের মুখ্য কারণ মনে করতেন চিকিত্সকরা। কিন্তু এই রোগের প্রকোপ ক্রমশই বেড়ে চলায় নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। গবেষণা বলছে, পুরুষদেরও যদি একাধিক মহিলা সঙ্গী থাকে, তাহলেও এই ভাইরাস বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। একাধিক মহিলার সঙ্গে ওরাল সেক্সের ফলে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচভিপিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। যা থেকে হতে পারে অরোফ্যারিঙ্গাল ক্যানসার। এই গবেষণা জনপ্রিয় হয় যখন অভিনেতা মাইকেল ডগলাস জানান, ওরাল সেক্সের কারণেই তিনি গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ডাটার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ন’হাজার গলার ক্যানসারে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে তারা একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে ওরাল সেক্সে অভ্যস্ত। তাঁদের মধ্যে সাত শতাংশের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে এইচপিভি ১৬। গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত ধূমপানের সঙ্গে জীবনে পাঁচের বেশি মহিলার সঙ্গে ওরাল সেক্সে লিপ্ত হন কোনও পুরুষ, তা হলে গলা, ঘাড় ও মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। কী কী উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন নিয়মিত ওরাল সেক্সের অভ্যাস থাকার পরে যদি গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয় বা গ্ল্যান্ড ফুলে যায় তাহলে সতর্ক হতে হবে। খাবার খেতে সমস্যা, ঢোক গিলতে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। এমন সব লক্ষণ দেখা গিলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনিই প্রয়োজন মনে হলে ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন। মাংসপিণ্ডের কোষ নিয়ে বায়োপসি করে যদি ক্যানসার ধরা পড়ে তাহলে গোড়া থেকে চিকিত্সা শুরু হলে ভাল। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এই অসুখ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কানে ব্যথা, নাক ডাকা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, গলার স্বরে আচমকা বদল আসে, ওজন কমতে থাকে হু হু করে। কোন বয়সে এই রোগের ঝুঁকি বেশি? গবেষকরা জানাচ্ছেন, মোট ১০০ ধরনের এইচপিভি-র খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও এইচপিভি ১৮ সার্ভিকাল ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এইচপিভি ১৬ থেকে অরোফ্যারিঙ্গাল ক্যানসারও ছড়াতে পারে। ৩০ বছর ধরে এইচপিভি সংক্রান্ত গলার ক্যানসারের গবেষণা চালাচ্ছে ওরাল ক্যানসার ফাউন্ডেশন। তাদের সমীক্ষা বলছে, ৪০-৬০ বছর বয়সী মহিলা ও পুরুষের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা অনেক বেশি। বর্তমানে দেখা গেছে, ২৫-৫৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে অনেক বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে দুই বা তার থেকে বেশি ওরাল সেক্স পার্টনার থাকলে এই সম্ভাবনা দেড়গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
সম্ভাব্য প্রতিকার কী হতে পারে?
যৌন জীবনে নিয়ন্ত্রণ রাখাটা সবচেয়ে আগে জরুরি। এই ভাইরাস রুখতে ভ্যাকসিনও রয়েছে। ৯-২৬ বছর বয়স পর্যন্ত এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। গলার সামান্য ব্যথা বা টিউমারের মতো কিছু অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক সময় এই ভাইরাস ছড়ালে দাঁতের ক্ষয়ও দেখা দেয়। তাই ডেনটিস্টের কাছে নিয়মিত চেকআপ জরুরি। অ্যালকোহল ও ধূমপান এই ভাইরাসকে অনেক বেশি সক্রিয় করে তোলে। সুতরাং নেশায় লাগাম টানাটাও দরকারি।